অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম, পিপিএন বাংলা: ভারত উপমহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শ্রীরামকে মহাপুরুষ বা মহাপ্রভু রূপে পূজা করেন। তার নাম জপ করেন। তার নামে জয়ধ্বনি করেন। এখানে বিরোধিতা ও বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। পূজা ও উপাসনা প্রতিটি ধর্মে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে হয়। পৃথিবীতে সুদূর অতীত কাল থেকে ধর্ম সম্প্রদায় ধর্মকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করেছে। আজও সেই ধারা অব্যাহত। আরো কুৎসিত ভাবে। প্রতিটি ধর্ম সম্প্রদায় এই অপকর্মে জড়িত। নাস্তিকরাও ক্ষমতা দখলের দৌড়ে পিছিয়ে নেই।
লক্ষণীয় যে, ভারতীয় সমাজ ও রাজনৈতিক চিন্তা ও চেতনার অভিমুখ এখন ঘৃণা ও প্রতিহিংসার মাধ্যমে মুসলিমদের অবদমন ও হিন্দুদের নিরঙ্কুশ প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা। এজাতীয় ভাবনা প্রবাহ গত প্রায় এক শতাব্দী কাল ধরে সক্রিয়। কিন্তু গত তিন দশকে প্রবাহের গতি উত্তরোত্তর বেগবান ও শক্তিশালী হয়েছে। তথাকথিত এই উগ্রজাতীয়তাবাদী ও জঙ্গী প্রবাহ অকস্মাৎ সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘ এক শতাব্দী কাল ধরে পরিকল্পিতভাবে পরিচর্যা হয়েছে। অনুকূল পরিবেশ নির্মাণে অবদান আছে তথাকথিত ডানপন্থী, বামপন্থী, মধ্যপন্থী ও যুক্তিবাদী- সকল হিন্দুর। কমবেশি। এই প্রক্রিয়া চলছে এক সুসংহত রণকৌশলের অধীনে।
এই প্রক্রিয়ার অন্যতম হাতিয়ার:
১) ইতিহাস বিকৃতি
২) ধর্মীয় উপাখ্যান ও রূপকথা নির্মাণ ও জনপ্রিয়করণ
৩) হিন্দু যুবা জঙ্গিকরণ
৪) ঘৃণা ও প্রতিহিংসার মনস্তত্ত্ব প্রসার
৫) অভ্যন্তরীণ শত্রু মুসলিম এবং বহিঃশত্রু পাকিস্তান মোকাবেলার প্রস্তুতি
৬) মুসলিম বিদ্ধেষী উগ্র ইহুদী, খৃষ্টান ও বৌদ্ধদের সঙ্গে সখ্যতা সৃষ্টি এবং
৭) রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা।
প্রতিটি হাতিয়ার সফল প্রয়োগ আজকের এই আবহের জন্ম দিয়েছে।
বাস্তবতাকে স্বীকৃতি প্রদান এবং বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার পরিচয়। বাস্তবতাকে অস্বীকার করা অথবা বাস্তবতার ভয়াবহতা থেকে নিরাপদে থাকতে নিজেদের কল্পিত বলয়ে সুরক্ষিত রাখার ভাবনা বিভ্রান্তিকর ও আত্মঘাতী।
এজাতীয় আবহে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় রণকৌশল কি হবে- সে বিষয়ে মুসলিমরা অস্বাভাবিকভাবে মৌন। তারা হীনবল ও হীনমন্যতার শিকার। তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়ে উদাসীন। তারা বিভক্ত। বিচ্ছিন্ন। স্বাধীনোত্তর ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার একমাত্র ঠিকাদার মুসলিমরা। তারা কখনই রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেনি। আগ্রাসী হিন্দুত্বের মোকাবেলার কথা ভাবেনি। ঘৃণা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়নি। তাসত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে হিন্দু মেরুকরণ চলছে। তারা নাকি হিন্দুদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি! দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক!
ঐক্য ও সংহতি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও মৈত্রী এবং দেশের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা এখন সাধারণ ভারতীয়দের উদ্বেগের বিষয় নয়। সংখ্যা ও শক্তিকে সংহত করে মুসলমানদের অবদমিত করার কৌশল উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা চলছে। এই পটভূমিতে জয় শ্রীরামের স্লোগানের প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে হবে। এখন আর এস এস-বিজেপির কাছে জয় শ্রীরাম জপনাম নয় ব্যাটল ক্রায়; রণধ্বনী। ধর্ম ও বিশ্বাস সকলের কাছে প্রাণের চেয়ে প্রিয়। ধর্ম ও বিশ্বাস রক্ষা করতে সকলেই জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। কিন্তু অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা আমাদের শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বিপজ্জনক। আসুন, আমরা সুখী, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ভারত রাষ্ট্রের জন্য আমাদের সম্ভাবনাময়ী শক্তি নিবেদন করি। সহিষ্ণু,সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল ভারতবর্ষ আমাদের সকলের স্বার্থ সুনিশ্চিত করবে।
বি: দ্র: – লেখাগুলো লেখক এর নিজস্ব মতামত পিপিএন বাংলা এর কোনরূপ পরিবর্তন করেনি। এর জন্য পিপিএন বাংলা দায়ী নয়।